উইকিলিকসের মাধ্যমে প্রকাশিত মার্কিন গোপন নথি হতে জানা যায়, ২৩ মে, ১৯৭৫ তারিখে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক তারবার্তায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানানো হয়।
এর মানে, খুনিরা ১৫ আগস্টের আগেও বঙ্গবন্ধুকে হত্যাচেষ্টা চালিয়েছিল।
তারবার্তায় জানানো হয়-
দুটি সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রেসিডেন্ট মুজিবুর রহমানকে ২১ মে সন্ধ্যায় হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। মুজিব ঢাকায় টেলিভিশনের নতুন ভবন (রামপুরা) সফর শেষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে ফেরার সময় গ্রেনেড চার্জের মাধ্যমে এই চেষ্টা চালানো হয়।... এবং প্রেসিডেন্টকে হত্যাচেষ্টা যেন প্রেসে না যায়, সে জন্য সরকারি তথ্য দপ্তর থেকে আদেশ আরোপ করা হয়েছে।
তারবার্তায় এই তথ্যে দুটি সূত্র উল্লেখ করা হয়-
১. প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা ইউনিটে কর্মরত পুলিশের একজন ডেপুটি সুপারইন্টেন্ডেন্ট মার্কিন এম্বাসীর একজন বাঙালি রাজনৈতিক সহকারীকে এই বিষয়ে অবহিত করে।
২. দ্বিতীয় সূত্র একজন সাংবাদিক, যিনি এম্বাসীর তথ্য কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। সাংবাদিকের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, মুজিব অক্ষত ছিলেন, এবং দুজন ব্যাক্তি গ্রেনেড হামলায় আহত হন।
উইকিলিকসের মাধ্যমে প্রকাশিত মার্কিন গোপন নথি
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর পাঠানো তারবার্তায় মার্কিন এম্বাসি জানায়, জুন থেকে শেখ মুজিব প্রশাসন সংস্কারের কাজ শুরু করেন, এবং এই কাজে তার বড় সহায়কদের একজন শেখ মনি। খুনিরা আশংকা করছিল, আরো দেরি করলে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। তাই, দ্রুততার সাথে তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর পাঠানো তারবার্তায় মার্কিনীদের মনোভাব বুঝতে পারা যায়। এরকম তারবার্তায় বলা হয়, নতুন সরকার শীতল যুদ্ধের শক্তিসমূহের পক্ষ অবলম্বনে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর মার্কিনরা আশংকা করছিল, শীতলযুদ্ধের অপর শক্তি সোভিয়েত রাশিয়া ও বঙ্গবন্ধুর মিত্র ভারত হয়তো এই ঘটনায় কোন পদক্ষেপ নেবে।
মার্কিন তারবার্তায় দিল্লিস্থ মার্কিন এম্বাসি ভারতীয় সামরিক অফিসারদের বক্তব্য উল্লেখ করে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড বিষয়ে ভারত সরকারের কোন পদক্ষেপের কথা তাদের জানা নেই।
ভারত সরকার যেন বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে কোন হস্তক্ষেপ না করে, সেজন্য মার্কিন কূটনৈতিক প্রয়াসও চালানো হয়।
মার্কিন এম্বাসি ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে কথোপকথনে বিষয়টি উঠে আসে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মত বৈশ্বিক যুদ্ধের পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান-মার্কিন-চীন চক্রের বিরুদ্ধে আবার যুদ্ধে জড়াতে চায়নি ভারত। তাদের অাশংকা ছিল, ১৯৭১ এ পরাজিত এই চক্র উপমহাদেশে আবার যুদ্ধ শুরু করতে পারে। এই ভাবনা থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড পরবর্তী প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনে সংযত ছিল ভারত।
তারপরও ভারত বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড পরবর্তী প্রতিরোধ যুদ্ধের শুরুতে গোপনে অনেক সহায়তা করেছিল। পরবর্তীতে বৈশ্বিক ও ভারতের রাজনীতির পটপরিবর্তনের কারনে এই সব কিছুই স্থিমিত হয়ে যায়।
wikileaks:
https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA02535_b.html
মে ২৩, ২০১৮ তে ফেসবুক প্রোফাইলে প্রকাশিত
No comments:
Post a Comment